আশরাফুল রিমন:
উদ্যোক্তা মানে যোদ্ধা। সাহসী না হলে উদ্যোক্তা হওয়া যায় না। ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে অর্থায়ন বড় বাধা। এ জন্য ঋণ প্রয়োজন, কিন্তু ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে গেলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বলা হয়, ব্যাংকের ঋণ পাওয়া অনেক সহজ, কিন্তু ঋণ নিতে গেলে দেখা যায় নানা ভোগান্তি।
ব্যবসা করতে হলে নারীদের সাহসী হতে হবে। তা না হলে সফল উদ্যোক্তা হওয়া যায় না বলে মনে করেন রিমন’স হ্যান্ড ক্রাফটের স্বত্বাধিকারী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী শামসুন্নাহার দ্বীপা ।
তিনি বলছেন, অর্থায়নই নারীদের ব্যবসার বড় বাধা। ব্যাংকগুলো সহজে ঋণ দেয় না, এ কারণে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় নারী উদ্যোক্তাদের।
ঋণপ্রাপ্তি সহজ ও নারীদের জন্য বেশি সুযোগ-সুবিধা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে দিপা বলেন, ‘এটি নিশ্চিত করতে পারলে ব্যবসা–বাণিজ্যে উৎসাহিত হবেন নারী উদ্যোক্তারা।’
দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, উদ্যোক্তাদের সমস্যাসহ ব্যবসায়িক নানা বিষয়ে কথা বলেছেন নারী উদ্যোক্তা দীপা।
করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ে। পরে ক্ষতি কাটিয়ে উঠে দেশের অর্থনীতি ক্রমেই ভালোর দিক যাচ্ছে। বিশেষ করে কৃষি, রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয় ইতিবাচক ধারায় ফিরে এসেছে। অর্থনীতির বাকি সূচকগুলোও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আশা করছি, চলতি বছরেই আগের চেহারায় ফিরে যাবে অর্থনীতি।
করোনার কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জে পড়েন। তাদের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন মেলার আয়োজন করছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। আবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করছে। ছোট-বড় মার্কেট, শপিং মল খুলে দেয়ায় ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে গতি বাড়ছে। উদ্যোক্তারা যেসব পণ্য উৎপাদন করেন সেগুলো যদি ঠিকমতো বাজারজাত করা যায়, তাহলে অচিরেই প্রাণ ফিরে পাবে অর্থনীতি।
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সুবিধার বিষয়ে আপনার মত কী?
প্রণোদনা প্যাকেজে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেয়া উচিত। কারণ, এখন নারীরা ব্যবসায় বেশ ভালো করছেন। তারা ব্যবসায় এগিয়ে আসছেন। সেক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার দেয়া খুবই জরুরি।
নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা করার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা কী?
নারী উদ্যোক্তাদের কয়েকটি বাধা রয়েছে। প্রশিক্ষণ অন্যতম সমস্যা। তাদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। এটা না হলে ব্যবসা শুরুর পর নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়।
এর সঙ্গে আছে সামাজিক বাধা, যদিও এটা আগের চেয়ে অনেক কমেছে। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে। তবে একজন নারী ব্যবসা করতে পারবে কি না, সে বিষয়ে পরিবার ও সমাজের সহযোগিতা আরও বেশি প্রয়োজন।
অর্থায়ন নারীর ব্যবসার ক্ষেত্রে বড় বাধা। অবশ্য বর্তমান সরকার উদ্যোক্তাবান্ধব হওয়ায় এ সমস্যার কিছুটা লাঘব হয়েছে। নারীদের এগিয়ে নিতে অনেক কাজ করছে সরকার। তরুণ ও নারী উদ্যোক্তারা যাতে সহজে ঋণ পেতে পারেন, সেজন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশনসহ অন্য ঋণদানকারী সংস্থা। তবে ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়া আরও সহজ করা দরকার।
বাংলাদেশে ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে পদে পদে বাধার অভিযোগ রয়েছে। আপনি কী মনে করেন?
ব্যবসার জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস খুব জরুরি। দ্রুত এটা চালু হলে উদ্যোক্তারা সুফল পাবেন। কারণ, এক জায়গায় সব সেবা পাওয়া গেলে সহজে শুরু করা যায়।
গ্রাম পর্যায়ে প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে। আমাদের কাজের সুযোগ আছে, অনেকে উদ্যোক্তা হতে চান, কিন্তু প্রশিক্ষণের অভাবে সেটা হতে পারেন না। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও প্রত্যেককে নিজের জায়গা থেকে উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। একজন উদ্যোক্তা হয়ে উঠলে অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়।
করোনার প্রভাবে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে উদ্যোক্তারা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশনসহ প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা দিতে হবে।
উদ্যোক্তা মানে যোদ্ধা। সাহসী না হলে উদ্যোক্তা হওয়া যায় না। ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে অর্থায়ন বড় বাধা। এ জন্য ঋণ প্রয়োজন, কিন্তু ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে গেলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বলা হয়, ব্যাংকের ঋণ পাওয়া অনেক সহজ, কিন্তু ঋণ নিতে গেলে দেখা যায় নানা ভোগান্তি।
জামানত ছাড়া নারীদের কিছু খাতে ঋণ দেয়া হয়। এর পরিধি আরও বাড়াতে হবে। উদ্যোক্তা উৎসাহিত করতে ঋণ পাওয়া আরও সহজ করতে হবে।
সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের কারণে এসব শিল্প ঘুরে দাঁড়িয়েছে। চামড়া রপ্তানি আয়ের অন্যতম খাত। বিশেষ সুবিধা দিলে আরও ভালো করতে পারবে এ শিল্প।
দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে নারীরা কতটুকু এগিয়েছেন?
গত ১০ বছরের চিত্র দেখলে বোঝা যায় নারীরা কীভাবে সাফল্য অর্জন করেছেন। ২০১২ সালে যখন উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করি, তখনকার পরিবেশ আর এখনকার পরিবেশ আলাদা।
বর্তমানে অনেক সংগঠন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য কাজ করছে। বর্তমান সরকার নারীবান্ধব অনেক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ডিজিটালাইজেশনের কারণে সারা বিশ্ব হাতের মুঠোয় চলে এসেছে।
এখন ইচ্ছা করলে অনলাইনে পেজ খুলে ব্যবসা করা যায়। কয়েক বছর আগেও এটা সম্ভব ছিল না। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। নারীরা এখন ঘরে বসে ফেসবুকে পেজ খুলে পোশাক, প্রসাধনী থেকে শুরু করে গৃহস্থালিসহ সব কিছুর ব্যবসা করতে পারছেন। ফলে অর্থনীতিতে নারীর সম্পৃক্ততা দিন দিন বাড়ছে।
একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হতে হলে কী করতে হবে?
আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। অদম্য মনোবল থাকতে হবে। যে ধরনের উদ্যোক্তা নারী হতে চান, সে বিষয়ে ধারণা থাকতে হবে। ঝুঁকি নিয়ে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে। ধৈর্য, আত্মবিশ্বাস, মনোবল থাকলে যেকোনো কাজে সফলতা আসবে।
আগামী বাজেটে কোন বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া উচিত?
কর্মসংস্থানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে আগের তুলনায় বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে।
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা দিতে হবে। তাহলে নারীরা ব্যবসা-বাণিজ্যে আরও উৎসাহিত হবেন। এ ছাড়া উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে কৃষি, শিল্প, সেবা খাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।