স্মৃতি চারণ…
প্রতিদিন জাদুঘরের পাশে ট্যাংক টি দেখলেই অনেক কথা মনে পড়ে। ১৫ আগষ্ট জাতির জনক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করার এরকম একটি ট্যাংক শাহবাগে অনেকদিন রাখা হয়েছিল।
আজ ৭ নভেম্বর। ভেবেছিলাম কিছু লিখবো না। কিন্তু মনকে বুঝ দিতে পারছিলাম না। ৭৫ এর ৭ নভেম্বর সকাল বেলা। ঢাকা শহর নীরব, স্তব্দ। ইসলামপুর রোডের পাশে জিন্দাবাহারে থাকি। বাসায় বসেই ইসলামপুর রোডের কোলাহল, শ্লোগান শুনতে পাচ্ছিলাম। কৌতুহল জাগলো কি ঘটনা জানার জন্য। ভয়ও কাজ করছিল।
কারন, নভেম্বরের ১ থেকে ৭ পর্যন্ত দেশ কারা চালাচ্ছিল। কি হচ্ছিল সবই ছিল অজানা। যখন শুনলাম খুনী মোশতাক, জিয়া বন্দী তখন অনেকটা আশ্বস্ত হয়েছিলাম ভেবে যে এবার বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রকৃত বিচার হবে,মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হবে। ইসলামপুর রোডের গলির মাথায় গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার মত এরকম অনেকেই উৎসুক জানার জন্য কি হচ্ছে। ইতিমধ্যেই কয়েকটি মিলিটারী ভ্যান অতিক্রম করলো। ভেতরে ছিল জোয়ানে ঠাসা। অনেকের হাতেই লাল রুমাল ছিল। সবার হাতে ছিল অস্ত্র।পরিস্কার মনে পড়ে শ্লোগান ছিল “সিপাহী জনতা ভাই ভাই” “নারায়ে তাকবির”। ভালো লাগেনি মোটেও।
মুক্তিযুদ্ধের একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি, যে জাতি “জয় বাংলা” শ্লোগানে দেশ স্বাধীন করেছে তাদেরকে শুনতে হচ্ছে “নারায়ে তাকবির”।
আকাশে মাঝেমধ্যে হেলিকপ্টার উডছে, মিগ উডছে।গোটা দেশ এক অনিশ্চিত যাত্রায়। হাঁটতে হাঁটতে গুলিস্তান চলে এলাম।সেখানে দেখলাম ট্যাংক ও সেনাবাহিনীর কনভয়ের সমাহার।
এক পর্যায়ে হেঁটে বঙ্গভবনের গেইটের সামনে চলে এলাম।সেখানে বেশ কয়েকটি ট্যাংক মোতায়েন ছিল। জনসমাগমও ছিল।এক পর্যায়ে মাইকে ঘোষণা করা হলো “ আপনারা এখান থেকে সরে যান , যেকোনো সময়ে ভারতীয় বিমান বোমাবর্ষণ করতে পারে”। এক শ্রেনীর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী আদর্শের রাজনৈতিক কর্মীদের উপস্হিতিও ছিল লক্ষ্য করার মত।তাদের মুখে ছিল “রুশ ভারতের দালালেরা হুশিয়ার সাবধান” শ্লোগান।
এদিকে যে খুব সুপরিকল্পিতভাবে মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার/ জোয়ান হত্যা করা হচ্ছিল তার কোনো প্রতিক্রিয়া কোথাও কোনোভাবেই পরিলক্ষিত হয়নি। সময়টা ছিল একেবারেই পাকিস্তানী ভাবধারার রাজাকার আল বদর আল শামসদের নিয়ন্ত্রণে। এখন ভাবি ৭১ এর মুক্তিযোদ্ধারা তখন কোথায় ছিলেন? ”জয় বাংলা” শ্লোগানটা যখন চলে গেল তখন তেমন প্রতিবাদ তো চোখে পড়েনি। ভাবি আমরা হয়তো এমন সহজেই পরিবর্তিত হই বা হতে পারি। ”জয় বাংলা” ধ্বনি কে রাস্ট্রীয়ভাবে পুনঃপ্রবর্তন করার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার এ আমল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো।
মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা কতৃক সারা বাংলাদেশে ১০০ সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আবারো সূচিত হলো অন্ধকারের ৭৫এর নভেম্বর থেকে আলোকিত নভেম্বরের। জাতির জনকের কন্যার হাত ধরে কখনোই বাংলাদেশ হারাবেনা তাঁর কাঙ্খিত পথ। এই দিনে নির্মমভাবে নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
লেখক:
অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমদ,
কোষাধ্যক্ষ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়