ইমরান,ঢাকা:
দেশে জ্বালানির মজুত নিয়ে উদ্বেগ ছড়ানো ব্যক্তিদের কড়া সমালোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আতঙ্ক ছড়ানোয় জড়িতদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘আসলে তারা খোঁজ রাখে কি না জানিও না। হঠাৎ দেখলাম একজন জ্বালানি সংকটের কথা বলল।
‘আসলে তারা অনেক বেশি জ্ঞানী আর তাদের ব্রেইন এত বেশি যে, কিছু জিনিস ভুলে যান। উল্টাপাল্টা কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চান।’
বুধবার দুপুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন সরকারপ্রধান।
বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সংকটের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশেও অকটেন-পেট্রল সংকট দেখা দিচ্ছে বলে যে প্রচার চলছে, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘ডিজেল আমাদের কিনতে হয়, কিন্তু অকটেন আর পেট্রল কিনতে হয় না। এটা আমরা যে গ্যাস উত্তোলন করি সেখান থেকে বাই প্রোডাক্ট হিসেবে রিফাইন করা পেট্রলও পাই, অকটেনও পাই।
‘বরং যতটুকু চাহিদা তার থেকে অনেক বেশি পেট্রল এবং অকটেন কিন্তু আমাদের আছে। অনেক সময় বাইরে বিক্রিও করি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনাভাইরাস থেকে একটু উত্তরণ ঘটাতে যখন আমরা চেষ্টা করছি, তখন শুরু হয়ে গেল ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। সেই সঙ্গে স্যাংশন। পাল্টা-পাল্টি স্যাংশন দেয়ার ফলাফল সারাবিশ্বে এখন খাদ্য ঘাটতি। বিশেষ করে জ্বালানি তেলের অভাব ভোজ্য তেলের অভাব সারাবিশ্বে মুদ্রাস্ফীতি রক্ষা করতে উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে।
‘প্রত্যেকটা দেশে তারা বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী, জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী এমনকি ভোজ্য তেল কিনতে গেলে লন্ডনে নির্দিষ্ট পরিমাণ দেয়া আছে। প্রত্যেকটা দেশে এই দৃশ্য। বাংলাদেশে যেন এ রকম দৃশ্য না আসে সেজন্য আগাম পদক্ষেপ নিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে আহ্বান করেছি বিদ্যুতে সাশ্রীয় হতে হবে, পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে, নিজেদের সঞ্চয় নিজেদের করতে হবে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে, তার ঢেউ থেকে বাংলাদেশ বাদ যাচ্ছে না। যায় না। আজকের পৃথিবীটা সে রকম। যেগুলো আমদানি নির্ভর সেগুলো তো আরও সমস্যা।
‘পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে বিদ্যুতে ভর্তিুকি দিচ্ছি জ্বালানীতে ভর্তিুকি দিচ্ছি। ভর্তুকি দিয়েই যাচ্ছি। তারপরও আমাদের লক্ষ্য উৎপাদন যেন অব্যাহত থাকে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিয়েছি যার যেখানে যতটুক জায়গা আছে চাষাবাদ করবেন। যার যতটুক জমি আছে উৎপাদন করতে পারবেন। উদ্বৃত্ত হলে অন্য দেশে সহযোগিতা করতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘সবাইকে সাশ্রয়ী থাকতে হবে। বিদ্যুৎ দিয়েছি সত্য। যেহেতু বিশ্বব্যাপী মন্দা দেখা দিয়েছে, উন্নত দেশগুলো বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হচ্ছে, মহাবিপদে যাতে না পড়ি তার জন্য আগে থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
‘সে কারণে সে পদক্ষেপ নিয়েছি আমরা সাশ্রয়ী হবার চেষ্টা করছি। বিদ্যুৎ পদক্ষেপ নিচ্ছি। এর মানে এই না যে বিদ্যুৎ একেবারে নাই বা শেষ হয়ে গেছে, তা কিন্তু না। কিছু কিছু জ্ঞানী মানুষ আছে মাঝে মাঝে অনেক কথা বলে বেড়ায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা অনেক বেশি জ্ঞানী, তাদের জ্ঞানের ভাণ্ডার এতো বেশি যে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিস তারা ভুলে যায়। কিন্তু উল্টা-পাল্টা কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। পাশাপাশি আমাদের রিজার্ভ নিয়েও কথা বলে।
‘২০০১-২০০৬ বিএনপি যখন ক্ষমতায়, রিজার্ভ কত ছিল? তিন বিলিয়নের কিছু ওপরে। ৩ দশমিক ৮। আওয়ামী লীগ সরকারের আসার পর আমরা যখন সরকার গঠন করি ২০০৯ সালে কিছুটা বেড়েছিল, যেখানে মাত্র ৭ বিলিয়নের মতো পেয়েছিলাম। ৪৮ বিলিয়ন পর্যন্ত রিজার্ভ বাড়াতে সক্ষম হয়েছিলাম।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘করোনাকালীন আমাদের আমদানি বন্ধ ছিল, এরপর আমদানি করতে হয়েছে। আমদানি করতে যেয়ে এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য আমাদের রিজার্ভ খরচ করতে হয়েছে। তাছাড়া আমরা যে ভ্যাকসিন কিনে দিয়েছি এই যে বিনাপয়সায় ভ্যাকসিন দিলাম, বিনা পয়সায় টেস্টিং, সেখানে তো প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়েছে। এমনকি একটা ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য সিরিঞ্জ থেকে যা যা দরকার আমরা তো সেগুলো বিদেশ থেকে কিনে আনতে হয়েছে।
‘শুধু কেনা না আমাদের বিমান পাঠিয়ে বিদেশ থেকে আনতে হয়েছে। সেখানে বিরাট অংকের টাকা খরচ করেছি। আমাদের আমদানিগুলো সমস্ত ক্যাপিটাল মেশিনারিজ। এটা মাথায় রাখতে হবে। এই ক্যাপিটাল মেশিনারিজ দিয়ে যে সমস্ত শিল্প গড়ে উঠবে সেখানে যখন প্রোডাকশনে যাবে, সেখানে তো আমাদের দেশের মানুষই লাভবান হবে। এটা তো সহজ। এই খরচ তো আমাদের করতেই হবে। রিজার্ভ থাকে কেন? কোন আপদকালীন সময় তিন মাসের খাদ্য শস্য কেনার মতো বা আমদানি করার মতো অর্থটা যেন আমাদের হাতে থাকে। তা আমাদের এখন যে রিজার্ভ আছে তাতে তিন মাস কেন, ছয় মাস নয় মাসের খাবারও কিনে আনতে পারব।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সেই পদক্ষেপ নিতে হবে, যেন খাদ্য শস্য আমাদের কিনতে না হয়। আমরা নিজেরা উৎপাদন করতে পারি, নিজেরা সাশ্রয়ী থাকি। তাহলে তো আর আমাদের রিজার্ভ খরচই হবে না। আপদকালীন সময়ের জন্য থাকতে হবে। ব্যাাপকভাবে ভর্তিুকি দিয়ে যাচ্ছি মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছি। জিডিপি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি, সেগুলো কেন তাদের চোখে পড়ে না সেটা আমি জানি না।
‘যারা আমাদের বুদ্ধিজীবী তারা অনেকে অনেক কথা লেখেন। পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে একজন অর্থনীতিবিদ লিখে ফেললেন যে পদ্মা সেতুতে কোন আয় তো হবেই না। বরং এটা অযথা। পদ্মা সেতুতে রেললাইন হচ্ছে সেটা নিয়েও আপত্তি- এই রেলে কে চড়বে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই হচ্ছে কোনো কোনো অর্থনীতিবিদের চিন্তা ধারা, তারা আবার আর্টিকেল লেখে। জানি না এরা কি খেয়ে লেখে, সেটা আমার কাছে সন্দেহ। বাংলাদেশটাকে কতটুকু চেনে সেটা নিয়েও আমার সন্দেহ। দক্ষিণ অঞ্চলের গিয়েছে কি না আমি জানি না।
‘আর একটা প্রতিষ্ঠান আছে, তারা সব কিছুতেই খারাপ দিক দেখে। তারা জীবনে ভালো কিছু চোখে পড়ে না। মনে হয় যেন ওদের দৃষ্টিশক্তিটাই কমে গেছে। ওদের মাথার ভেতরে বিশেষ করে কেয়ারটেকার গভমেন্ট যখন ২০০৭ সালে এসেছিল তারা হয়তো ওদের মাথায় কোনো কিছু একটা করে দিয়ে গেছে যার জন্য মাথার মধ্যে এটাই ঘোরে যে, একটা সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ দেশে চলুক এটা তাদের পছন্দ হয় না।’
তিনি বলেন, ‘দেশটা যে এগিয়ে যাচ্ছে এটা তাদের চোখে পড়ে না। কারণ একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি যদি বাংলাদেশে থাকে তাহলে তাদের আবার কদর বাড়ে। তারা মনে করে তারাই জ্ঞানী তারাই সব পারে। কিন্তু আমরা হয়তো তাদের মতো ওতো জ্ঞানী না, অতো লেখাপড়াও শিখি নাই, কিন্তু দেশটাকে চিনি।
‘জ্ঞানীরা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তো উন্নয়নশীল দেশে যেতে পারেনি। আমাদের মতো আমরা যারা লেখাপড়া জানি না, আমরাও যখন ক্ষমতায় তখনই বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আমরা দেশের মানুষকে ভালোবেসে মাটি মানুষের জন্য কাজ করি বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।’